পৃথিবীতে স্বপ্ন সবাই দেখে কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে রুপান্তরিত করার মত সাহস ও মেধা খুব কম লোকেরই থাকে। ইলন মাস্ক সেই ক্ষণজন্মা সাহসী লোকেদের মধ্যে একজন। তিনি তার দূরদর্শিতা সাহস. ও মেধা দিয়ে পেপাল, স্পেস এক্স এবং টেস্লার মত কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ইলন মাস্ক
তিনি স্বপ্ন দেখছেন পৃথিবীর বাইরেও মানুষের অস্তিত্বকে ছড়িয়ে দেয়ার। তিনি রিইউজেবল রকেট তৈরি করে মহাকাশ ভ্রমনে বিজ্ঞানকে প্রায় ১০০ বছর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। হ্যা. আজকের এই ভিডিওতে আমরা স্পেসেক্স এবং টেস্লার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের অনুপ্রেরণামূলক গল্প শুনবো। তার জীবনের উত্থান, পতন ও লড়াইয়ের কথা শুনব। জানবো তার সফলতার রহস্য ও গল্প। জানবো তরুণদের সফলতার জন্য তার পরামর্শ কি।
ইলন মাস্ক ১৯৭১ সালের জুন মাসের ২৮ তারিখে সাউথ আফ্রিকায় জন্ম গ্রহন করেন। তার মা ছিলেন একজন ডায়েটিশিয়ান এবং তার বাবা ছিলেন একজন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি কম্পিউটার ভালবাসতে শুরু করেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই একজন চিন্তাবিদ ছিলেন। ইলন মাস্ক শৈশবে তিনি ছিলেন একজন বই পোকা। রিউমার আছে যে তিনি শৈশবে দিনে প্রায় ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন।
তিনি বলেন, আমি বড় হয়েছি বই পড়ে, এরপরে আমার বাবা মায়ের হাতে। মানে তাকে বই প্রথমে মানুষ করেছে, তারপরে তার বাবা-মা। মাস্ক মাত্র ১২ বছর বয়সে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখেন। তিনিব্লাস্টার নামের একটা গেম তৈরি করেন এবং একটা ম্যাগাজিনের কাছে এটা গেইম ৫০০ ডলারে বিক্রি করে দেন। তিনি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ পেন্সিল্ভেনিয়া থেকে ফিজিক্স এবং ইকোনমিক্সে লেখাপড়া শেষ করেন।
তিনি তার জীবনের ধাক্কা খান যখন তিনি নেটস্কেপ নামক একটি টেক-কোম্পানিতে চাকরির জন্য এপ্লাই করেন। কিন্তু সেই কোম্পানি থেকে তাকে রিজেক্ট করে দেয়া হয় কারন তার কম্পিউটার সাইন্স ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলনা। এই রিজেকশনে তিনি এতই কষ্ট আর লজ্জা পেয়েছিলেন যে এই কথা কাউকে বলতেও লজ্জা পেতেন। কিন্তু এই রিজেকশন তাকে আটকাতে পারেনি।
তিনি তার নিজের আইডিয়া থেকে তার ভাই কিম্বাল মাস্কের সাথে জিপ ২ নামের একটি ওয়েব এপ্লিকেশন তৈরি করেন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে ২৮ হাজার ডলার লোণ নিয়ে জিপ২ তৈরি করেন। জিপ২ সংবাদপত্রের জন্য ট্রাভেল গাইড হিসেবে কাজ করত। জিপ ২ যখন বড় হতে থাকে বোর্ড অফ ডিরেক্টররা তাকে সিইও পদ থেকে বের করে দেন। কারন তাদের মাস্কের উপর আস্থা ছিলনা। এরপরে ১৯৯০ সালে জিপ ২ কমপ্যাক কম্পিউটার্সের কাছে ৩০৭ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়ে যায়। মাস্ক সেখান থেকে তার শেয়ারের ২২ মিলিয়ন ডলার পান।
তিনি তার আয়ের অর্ধেকের বেশী টাকা বিনিয়োগ করেন x.com নামে একটা অনলাইন ব্যাঙ্কিং সার্ভিস চালু করতে। এই কোম্পানি থেকেই পরবর্তিতে পৃথ্বীর সবচেয়ে পাওয়াফুল অনলাইন ব্যাঙ্কিং সিস্টেম পেপাল চালু করেন। মাস্ক প্রাথমিক অবস্থায় পেপালের সিইওর দায়িত্ব পালন করলেও পরে তিনি এই পদ হারান। ২০০২ সালে ইবে পেপাল কিনে নেয় এবং মাস্ক ১৮০ মিলিয়ন ডলার মাস্ক রাশিয়ায় যান পুরানো ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল কেনার জন্য।
যা দিয়ে তিনি মঙ্গল গ্রহে একদল ইঁদুর পাঠাতে চেয়েছিলেন। রাশিয়ানরা তার কাছ থেকে প্রতিটি রকেটের দাম ৮ মিলিয়ন ডলার দাবী করে। মাস্কের কাছে এই দাম অনেক বেশী মনে হয়। তারা মাস্ককে নিয়ে অনেক ঠাট্টা করেন। মাস্ক তাদের উত্তরে বলেন আমরা আমাদের রকেট নিজেরাই বানাবো। একথা বলে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। ফিরতি ফ্লাইটে মাস্কের মনে হয় তিনি নিজেই একটি কোম্পানি চালু করতে পারেন। যেটা কম মুল্যে তার প্রয়োজনীয় রকেট তৈরি করতে পারে।
মাস্ক অংক করে বের করেন যে রকেট বানানোর কাঁচামালের দাম রকেটের দামের মাত্র ৩ পারসেন্ট। সেখান থেকে তিনি একটা বৈপ্লবিক ধারনা নিয়ে আসেন। ২০০২ সালে মাত্র ১০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে মাস্ক স্পেসেক্স শুরু করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল বিশাল। তিনি চেয়েছেন বানিজ্যিকভাবে স্পেসশিপ তৈরি করতে যা স্পেস ট্র্যাভেলের জন্য কাজে লাগবে।
২০০৬ সালে স্পেসেক্স তাদের প্রথম রকেট লঞ্চ করে। কিন্তু প্রথম রকেট লঞ্চের মাত্র ৩৩ সেকেন্ড পরেই তা বিস্ফোরিত হয়। শু মাস্কের স্বপ্ন। কিন্তু তিনি এক.আবার চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয়বার ব্যর্থ হয়েছেন। তৃতীয়বারও ব্যর্থ হয়েছেন। তার তৃতীয় বারের ব্যর্থতা স্পেসেক্সকে প্রায় ধ্বংসের শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসে। অন্য কেউ হলে হয়ত দমে যেত কিন্তু আমরা কথা বলছি সুপার জিনিয়াস ইলন মাস্কের কথা
মাস্ক তার সব সম্বল এক করে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য আরো একবার বাজি খেলেন। মাস্কের কাছে শুধুমাত্র ৪ নাম্বার রকেট উড়ানোর মতই টাকা ছিল। ২০০৮ সালের ২৮ সেপ্টম্বর তিনি ৪র্থ ফেল্কন ১ রকেট লঞ্চ করেন এবং তা সফল ভাবে পৃথিবী ছেড়ে যায়। মাস্ক ইতিহাস তৈরি করেন। তার লঞ্চ করা ফ্যাল্কন ১ পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তিগত ভাবে লঞ্চ করা রকেট যা সফলভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর নাসা স্পেসেক্সকে ১.৬ বিলিয়ন ডলারের কন্টাক্ট দেয়। তাদের কাজ ছিল মালবাহী কার্গো পৃথিবী থেকে মহাকাশ স্পেস ষ্টেশনে ট্রান্সপোর্ট করার।
২০০৯ সালে স্পেসেক্স বারবার ব্যবহার করা যায় এমন রকেটের আইডিয়ার কথা পাব্লিক্লি এনাউন্স করে। কিছু ব্যর্থ চেষ্টার পরে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে স্পেসেক্স তাদের রকেট সফলভাবে এটা একটা পারফেক্ট ল্যান্ডিং ছিল।
স্পেসেক্সই প্রথম কোম্পানি যাদের রকেট ধ্বংস হওয়া ছাড়াই পৃথিবীতে ল্যান্ড করতে পারে আবার সফলভাবে পরেও তা ব্যবহার করা যায়। মাস্ক বিশ্বাস করেন তার এই রিউজেবল রকেটকে আরো কার্যকর করতে পারলে মহাকাশ ভ্রমনের যে খরচ তা অনেক কমে যাবে। মাস্ক স্বপ্ন দেখেন যে একদিন তিনি রেড প্লানেটে একটা শহর বানাবেন।
মাস্ক পৃথিবীর সবচেয়ে পপুলার সোলার পাওয়ার গাড়ি টেসলা মোটরেরও কর্নধার। তিনি ২০০৩ সালে টেসলা মোটর প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি টেসলা নিয়েও কয়েক ধাপে অনেক ধাক্কা খান।
রোডস্টার হল ছিল টেসলার বানানো প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি। কিন্তু এর দাম অনেক বেশী হয়ে যায় এছাড়া এটি লঞ্চ করতেও দেরী হয়ে যায়। বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যায় পরে ও ব্যর্থ প্রডাক্টের লঞ্চের জন্য টেস্লা অনেক অর্থনীতিক লসে পরে। কিন্তু তিনি বিপদে দিশেহারা হননি। তিনি তার জীবনের সকল জমানো টাকা ইনভেস্ট করেন এই প্রোজেক্টে।
প্রচুর কষ্টের মুখোমুখি পরে একসময় তিনি আশার আলো দেখেন। তার ইলেক্ট্রিক গাড়ি কাস্টমারদের প্রচুর কষ্টের মুখোমুখি পরে একসময় তিনি আশার আলো দেখেন। তার ইলেক্ট্রিক গাড়ি কাস্টমারদের কাছ থেকে ভালো রিভিউ পাওয়া শুরু করে।
মাস্ক বর্তমানে কম খরচে কিভাবে বার বার ব্যবহার করা যায় এমন জ্বালানী উদ্ভাবনে নিজেকে নিয়োগ করেছেন। তিনি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন প্রিথিবিকে একটা বাসযোগ্য জায়গায় পরিনত করার।
কিছু মানুষ আছেন যারা জন্মের পর থেকেই মহান হওার সকল গুনাবলি নিয়ে জন্মান। সব কিছু পেয়ে যান। আবার কিছু মানুষ আছেন যারা সকল বৈরিতা বাধা পেরিয়ে সফল হন। মাস্ক সাধারণ পরিবারে জন্মিয়ে, স্কুলের বুলিদের হাতে অত্যাচারিত হয়েও নিজের স্বপ্নকে পুশে রেখেছেন।
তার আইডিয়া নিয়ে অনেকেই হেসেছে, তিনি রিজেক্টেড হয়েছেন। ব্যর্থ হয়ে অপমান হয়েছেন কিন্তু তিনি নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছেন। নিজের উপর বিশ্বাস সফল হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ধাপ।