মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতিকর দিক

বর্তমান সময়ের একটি বহুল ব্যবহৃত ও প্রচলিত যন্ত্র মোবাইল ফোন। এই মুহূর্তে যদি প্রশ্ন করি, কোন জিনিসটা ছাড়া এক মুহূর্ত চলে না, তাহলে আমাদের মাঝের শতভাগ মানুষের কাছ থেকে একটা উত্তরই আশা করা যায়, আর সেটা হলো, মোবাইল বা স্মার্টফোন। আজকাল মোবাইল ফোন ব্যবহারের দ্রুততা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে, দেশের অলিগলিতে দেখা মিলে মোবাইল টাওয়ার গুলির। 

মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতিকর দিক

আমাদের সবারই কমবেশি নেটওয়ার্কের সমস্যায় ভুগতে হয়। তাই কাছেপিঠে মোবাইল টাওয়ার থাকলে, আমাদের আনন্দের শেষ থাকে না। কিন্তু আপনি জানেন কি? এই মোবাইল টাওয়ারগুলি আমাদের সংস্পর্শে থাকার ফলে আমাদের কতটা ক্ষতি করছে!. জানি, আপনার উত্তরটা হবে “না”। আবার অনেকেই বলবেন, এটা কি বোকার মত প্রশ্ন! মোবাইল টাওয়ার আমাদের কি বা ক্ষতি করবে!

আসলে সত্যি এটাই, মোবাইল টাওয়ার গুলির বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে আমরা খুব কম মানুষরাই অবগত। তাই বিষয়টা আমাদের অনেকের কাছেই হাসি-তামাশার মত। কিন্তু বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন যে, স্থাপিত প্রতিটি মোবাইল টাওয়ার প্রচুর বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় বিকিরণ নির্গত করে থাকে। যা বিভিন্ন ধরনের রোগ এর কারণ। এবং প্রতিটি প্রাণীর উপর প্রভাব বিস্তারকারী।

আমাদের আজকের আলোচিত বিষয় মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতিকর দিক। আপনি যদি আপনার পরিবার সমাজ ও সকল জীবিত প্রাণীকে এর প্রভাব থেকে বাঁচাতে চান এবং নিজে সুরক্ষিত থাকতে চান, তাহলে অবশ্যই এই বিষয়ে আপনার সঠিক জ্ঞান লাভ করা উচিত। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক, মোবাইল টাওয়ারের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে।

<<<চাকরির প্রস্তুতি>>>

মোবাইল টাওয়ার থেকে নির্গত তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ প্রকৃতিতে অবস্থানরত প্রতিটি জীবিত প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। মানুষ সহ সকল জীবিত প্রাণীর ওপর এটি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এই টাওয়ার থেকে নির্গত হয় উচ্চ কম্পাংকের রেডিও ওয়েভ এবং মাইক্রোওয়েভ। আর এই ওয়েবের কম্পাঙ্ক যত বেশি তার শক্তি ও প্রভাবও ততবেশি।  যা মানবদেহের জন্য খুবই ভয়ানক। তাহলে আপনি বুঝতেই পারছেন যে, মোবাইল টাওয়ারের নিকটবর্তী স্থানে থাকলে এটি আপনার ওপর কতটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে। 

আমরা সবাই জানি, একটি মানুষ তার স্নায়ুবিক তারণার মাধ্যমে জীবজগতে স্বাভাবিকভাবে আচরণ করে থাকে। আর এই স্নায়ুবিক তারনা তড়িৎচুম্বকীয় কম্পাঙ্কের সাহায্যে  মস্তিষ্কে যায়। তাই আপনি যদি মোবাইল টাওয়ারের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থান করেন তাহলে টাওয়ার থেকে আসা তড়িৎচুম্বকীয় কম্পন আপনার স্নায়ুর তড়িৎ চুম্বকীয় কম্পনের সাথে স্বাভাবিকভাবে মিলে যায় এবং আপনার ওপর তার কার্যকলাপ ব্যাহত করে।

যেমন ধরুন, হেলিকপ্টারে বসে যদি মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করেন তাহলে সিগন্যাল ওভারলেপিং এর ফলে যেমন সমস্যা তৈরি হয়, অনেকটা সেরকম। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, শুধুমাত্র মোবাইল টাওয়ার আপনার নিকটবর্তী স্থানে থাকার ফলে, এমন প্রভাব সৃষ্টি করছে, যা আপনি টেরও পাচ্ছেন না! 

এবার চলুন মানবদেহে আক্রান্ত সমস্যা গুলোর দিকে নজর দেওয়া যাকঃ

মাথা ব্যাথা, স্মৃতিভ্রম, হৃদরোগ, লিউকেমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্কের টিউমার, মস্তিষ্কের ক্যান্সার সহ গর্ভে থাকা সন্তানের জন্ম বিকলতা ও শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া ইত্যাদি সকল রোগের মূলে রয়েছে মোবাইল টাওয়ার। কি অবাক হচ্ছেন?. আসলে অবাক হলেও এটাই সত্যি। আর এটা বিজ্ঞানীদের দ্বারা শতভাগ সত্যি বলে প্রমাণিত। 

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ নির্গত করে মোবাইল টাওয়ার। আর টাওয়ার থেকে নির্গত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি তরঙ্গ গুলির শক্তিস্তর তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষত গামা রশ্নি, এক্স-রে এবং অতিবেগুনি আলোকের মতো ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য পরিচিত রেডিয়েশনের ধরনের তুলনায়। মূলত মোবাইল বা সেলফোন টাওয়ার দ্বারা প্রদত্ত আরএফ অর্থাৎ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি তরঙ্গের শক্তি ডিএনএ অনুর রাসায়নিক বন্ধন গুলি ভাঙার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই এভাবে বিকিরণে এই শক্তিশালী রশ্মিগুলো এক সময় ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। 

তার আরেকটি বিষয় হলো, ইস্যুটির তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সাথে সম্পর্কিত। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি তরঙ্গ গুলি দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য রয়েছে। আর এগুলো কেবলমাত্র এক ইঞ্চি বা দুটি আকারে ঘনীভূত হতে পারে। আর এই রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি তরঙ্গ আরএসএস তরঙ্গ থেকে শক্তি শরীরের পৃথক কোষকে প্রবাহিত করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে কেন্দ্রীভূত হতে সক্ষম। যা ধীরে ধীরে আমাদের মানব শরীরের উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

এছাড়া শিশুরা টাওয়ারের এই ক্ষতিকারক বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় বিকিরনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি পশু পাখি পোকামাকড় এবং প্রকৃতিতে উৎপাদিত সকল সবুজ সতেজ গাছপালাগুলো বিরূপ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 

তাহলে বুঝতেই পারছেন মোবাইল টাওয়ারের ক্ষতির দিকগুলো আমাদের জীবনে কতটা ভয়াবহ। কিন্তু এত কিছুর পরেও, সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, আমাদের দেশে স্থাপিত সমস্ত টাওয়ার গুলি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্লিনিক হাসপাতাল এবং আবাসিক অঞ্চল গুলির মত সরকারি জায়গাগুলোর আশেপাশে।

কিন্তু টাওয়ার তৈরীর শর্তাবলী লক্ষ করলে আপনি দেখতে পাবেন, চল্লিশের বেশি তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং এর ছাদে বা উন্মুক্ত স্থানে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা উচিত। যেখানে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন প্রতিষ্ঠান থাকবে না। আমাদের সবার উচিত এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠা। আর  মোবাইল ফোন সংস্থাগুলোর দায়িত্ব, জনগণের স্বার্থ ও পরিবেশের স্বার্থে টাওয়ার স্থাপনের একীভূত নীতি নিয়ে আসা। 

নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ যুক্ত হোন।

Mitu Khatun
Mitu Khatun

আমি মিতু। সবসময় লিখালিখি করতে ভালোবাসি। আর ভালোবাসি স্বাধীনভাবে বেচে থাকতে।

Articles: 210

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *